সেরের ওপর সোয়া সের হয়েছে আওয়ামী ওলামা লীগ। যুদ্ধাপরাধের বিচারের তোড়ে জামায়াতে ইসলামী যখন পগারপার, তখন সরকারের কোলে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন এনারা। এঁরা ধর্মেও আছেন জিরাফেও আছেন। এঁরা নাস্তিকের জন্য মৃত্যুদণ্ডের আইন তথা ব্ল্যাসফেমি অ্যাক্ট চান, আবার যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিও চান। এঁরা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র মোতাবেক ‘অসাম্প্রদায়িকতা’ও মানেন আবার ‘সরকারের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা হিন্দুত্ববাদী মহলের গভীর চক্রান্ত’ বিরোধী। এঁরা হাঁসজারু, অর্থাৎ একই সঙ্গে হাঁসের মতো নিরীহ আর শজারুর মতো কাঁটাময়।
ব্লগার নীলাদ্রিকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রেক্ষাপটে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধর্মের নামে সন্ত্রাস করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি জানাচ্ছেন, তখন আওয়ামী লীগের ছাতার ছায়ায় থাকা ওলামা লীগ ‘ধর্মপ্রাণদের সরকার’ চায়। বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনকেও তাঁরা ‘হারাম’ বলে নিষিদ্ধ করতে চান!
১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এক হয়েছিলেন। এর এক নাম জাতীয়তাবাদ, আরেক নাম কিন্তু অসাম্প্রদায়িকতা। অসাম্প্রদায়িকতার চেয়েও স্পষ্ট কথা হলো সর্বসম্প্রদায়মান্যতা; অর্থাৎ সব সম্প্রদায়ের সমান মর্যাদা ও অধিকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এই ঐক্যের নেতা ও প্রতীক। এখন ওলামা লীগ বলছে, ১৫ আগস্টকে ধর্মীয়ভাবে পালন করতে হবে এবং খালেদা জিয়াকে মোনাফেক ঘোষণা করতে হবে! অতিভক্তি চোরের লক্ষণ!
সম্রাট আকবরের দিন-ই-ইলাহিকে অনেকে ভুল করে ধর্ম ভাবেন। আসলে সেটা ছিল বহু ধর্মমতের মিলনভূমি ভারতবর্ষের উপযোগী অসাম্প্রদায়িকতার নীতি। সব সম্প্রদায়কেই রাষ্ট্রে ও সমাজে সমানাধিকার দেওয়ার নীতি। ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল অনেকটা সে রকম। কিন্তু ওলামা লীগ যে ভাষায় ৮ আগস্ট বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে দাবিনামা পাঠিয়েছে, তার পাতায় পাতায় হিংসার বর্ণমালা। দুঃখের মধ্যে হাসি পায়, হাসতে গিয়েও জ্বালা হয়। এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ঢাকা।
বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিল সর্বজনের, সর্বসম্প্রদায়ের, সর্বমানবতার জাতীয়তাবাদ। মাওলানা ভাসানীর মতো ইসলামি সমাজতন্ত্রী আর মণি সিংহের মতো বামপন্থীরা স্বাধীনতার পথে মুজিব-তাজের সহযোগী ছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের সহযোগীরা ভিন্নমতের মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দিতে চান, মোনাফেক ঘোষণা করতে চান! তাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের বিপক্ষে, বাল্যবিবাহের পক্ষে। এসব দেখে প্রকৃত মুসলমান লজ্জা পাবেন।
ব্লগার নীলাদ্রিকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রেক্ষাপটে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধর্মের নামে সন্ত্রাস করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি জানাচ্ছেন, তখন আওয়ামী লীগের ছাতার ছায়ায় থাকা ওলামা লীগ ‘ধর্মপ্রাণদের সরকার’ চায়। বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনকেও তাঁরা ‘হারাম’ বলে নিষিদ্ধ করতে চান!
১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এক হয়েছিলেন। এর এক নাম জাতীয়তাবাদ, আরেক নাম কিন্তু অসাম্প্রদায়িকতা। অসাম্প্রদায়িকতার চেয়েও স্পষ্ট কথা হলো সর্বসম্প্রদায়মান্যতা; অর্থাৎ সব সম্প্রদায়ের সমান মর্যাদা ও অধিকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এই ঐক্যের নেতা ও প্রতীক। এখন ওলামা লীগ বলছে, ১৫ আগস্টকে ধর্মীয়ভাবে পালন করতে হবে এবং খালেদা জিয়াকে মোনাফেক ঘোষণা করতে হবে! অতিভক্তি চোরের লক্ষণ!
সম্রাট আকবরের দিন-ই-ইলাহিকে অনেকে ভুল করে ধর্ম ভাবেন। আসলে সেটা ছিল বহু ধর্মমতের মিলনভূমি ভারতবর্ষের উপযোগী অসাম্প্রদায়িকতার নীতি। সব সম্প্রদায়কেই রাষ্ট্রে ও সমাজে সমানাধিকার দেওয়ার নীতি। ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল অনেকটা সে রকম। কিন্তু ওলামা লীগ যে ভাষায় ৮ আগস্ট বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে দাবিনামা পাঠিয়েছে, তার পাতায় পাতায় হিংসার বর্ণমালা। দুঃখের মধ্যে হাসি পায়, হাসতে গিয়েও জ্বালা হয়। এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ঢাকা।
বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিল সর্বজনের, সর্বসম্প্রদায়ের, সর্বমানবতার জাতীয়তাবাদ। মাওলানা ভাসানীর মতো ইসলামি সমাজতন্ত্রী আর মণি সিংহের মতো বামপন্থীরা স্বাধীনতার পথে মুজিব-তাজের সহযোগী ছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের সহযোগীরা ভিন্নমতের মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দিতে চান, মোনাফেক ঘোষণা করতে চান! তাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের বিপক্ষে, বাল্যবিবাহের পক্ষে। এসব দেখে প্রকৃত মুসলমান লজ্জা পাবেন।
আওয়ামী লীগ যদি সহনশীল সমাজ ও মানবিক সংস্কৃতির পক্ষে এখনো থেকে থাকে, তাহলে দলের পরিচয় বহন করে এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য বন্ধ করতে হবে
ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে বাঙালি মুসলমান, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে বাঙালি মুসলমান, শোষণহীন সমাজের সংগ্রামে জীবন ও সম্পদ দান করেছে বাঙালি মুসলমান। পদে পদে বাঙালি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানকে এবং গারো–সাঁওতাল–চাকমাদের পাশে পেয়েছে। রণাঙ্গনে একসঙ্গে লড়েছে, বধ্যভূমিতে একসঙ্গে মরেছে, শরণার্থীশিবিরে একসঙ্গে ভুগেছে। মুসলিম বা হিন্দু যা-ই হোক; সাম্প্রদায়িক হিংসার সওদাগরেরা এই ঐক্য ভাঙতে চায়। ওলামা লীগ কি তাহলে বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা?
বাঙালি সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ উৎসব পয়লা বৈশাখ নিয়ে অনেকের হাড়জ্বালা। অথচ পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বাংলাদেশে লোকসমাগম অনেক বিরাট হয় এই উৎসবে। ইসলাম সহনশীলতা ও সমন্বয়ের ধর্ম বলেই ভিন্ন দেশ, জাতি, সংস্কৃতি ও ভাষায় ছড়িয়েছে, বৈশ্বিক ধর্ম হতে পেরেছে। এর মহান প্রচারকেরা যদি দেশীয় ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভালো না বাসতেন, তাহলে বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান স্বভাষায় ধর্মের বাণী শুনতে পারতেন না। ইরানে ইসলাম-পূর্ব যুগের বর্ষবরণের ‘নওরোজ’ উৎসবকে কেউ অনৈসলামিক বলে না। এই ওলামা লীগাররা জানেন না, মোগল সম্রাট আকবরের সময়েই মুসলিম চান্দ্রমাসের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বাংলা নববর্ষের প্রবর্তন হয়।
আওয়ামী লীগ যদি সহনশীল সমাজ ও মানবিক সংস্কৃতির পক্ষে এখনো থেকে থাকে, তাহলে দলের পরিচয় বহন করে এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য বন্ধ করতে হবে। তাদের সঙ্গে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের যেকারও যোগাযোগ বাদ করতে হবে। কিন্তু কী দেখছি? ওলামা লীগের দুটি শাখাই এক দেহে মিলেছে। একটির দপ্তর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে, অপরটির ঠিকানা নেই। কিন্তু তাঁরা আসা–যাওয়া করেন ধানমন্ডির দলীয় সভানেত্রীর কার্যালেয়। উভয়ই দলীয় সভানেত্রীর সমর্থনের দাবিদার। একটি গ্রুপের সঙ্গে আছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মো. আবদুল্লাহ ও দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। অপর পক্ষে আছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। আমাদের এখন শ্যাম রাখি না কুল রাখি দশা। উভয় গ্রুপেই ওজনদার নেতারা আছেন!
বিগত জরুরি অবস্থায় যখন জনগণ গণতন্ত্রের দাবি তুলছিল, তখন বিমানবন্দরের সামনে বাউল ভাস্কর্য নিয়ে ফ্যাসাদ তুলেছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি আমিনী। সে সময় তিনি দাবি করেছিলেন অস্থায়ী সরকারের উচ্চমহল তাঁদের পক্ষে। সে সময়কার সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানও জোশের বশে আমিনীপন্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি খতমে নবুওতের নেতাও জানিয়েছিলেন, কোনো একজন ‘সব অর্থ দিচ্ছেন; কিন্তু তিনি নাম প্রকাশ করতে রাজি নন’ (সমকাল, ১৮ অক্টোবর ২০০৮)। সেনা-সমর্থিত অস্থায়ী সরকার আপসে নতিস্বীকার করেছিল। স্বৈরশাসক এরশাদের ক্ষমতা টেকানোর বড় অস্ত্র ছিল ধর্ম। আজকাল ধর্মবিদ্বেষও রাজনীতির পুুঁজি। মাঝখানে মরছে মানুষ।
বাঙালি সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ উৎসব পয়লা বৈশাখ নিয়ে অনেকের হাড়জ্বালা। অথচ পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বাংলাদেশে লোকসমাগম অনেক বিরাট হয় এই উৎসবে। ইসলাম সহনশীলতা ও সমন্বয়ের ধর্ম বলেই ভিন্ন দেশ, জাতি, সংস্কৃতি ও ভাষায় ছড়িয়েছে, বৈশ্বিক ধর্ম হতে পেরেছে। এর মহান প্রচারকেরা যদি দেশীয় ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভালো না বাসতেন, তাহলে বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান স্বভাষায় ধর্মের বাণী শুনতে পারতেন না। ইরানে ইসলাম-পূর্ব যুগের বর্ষবরণের ‘নওরোজ’ উৎসবকে কেউ অনৈসলামিক বলে না। এই ওলামা লীগাররা জানেন না, মোগল সম্রাট আকবরের সময়েই মুসলিম চান্দ্রমাসের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বাংলা নববর্ষের প্রবর্তন হয়।
আওয়ামী লীগ যদি সহনশীল সমাজ ও মানবিক সংস্কৃতির পক্ষে এখনো থেকে থাকে, তাহলে দলের পরিচয় বহন করে এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য বন্ধ করতে হবে। তাদের সঙ্গে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের যেকারও যোগাযোগ বাদ করতে হবে। কিন্তু কী দেখছি? ওলামা লীগের দুটি শাখাই এক দেহে মিলেছে। একটির দপ্তর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে, অপরটির ঠিকানা নেই। কিন্তু তাঁরা আসা–যাওয়া করেন ধানমন্ডির দলীয় সভানেত্রীর কার্যালেয়। উভয়ই দলীয় সভানেত্রীর সমর্থনের দাবিদার। একটি গ্রুপের সঙ্গে আছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মো. আবদুল্লাহ ও দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। অপর পক্ষে আছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। আমাদের এখন শ্যাম রাখি না কুল রাখি দশা। উভয় গ্রুপেই ওজনদার নেতারা আছেন!
বিগত জরুরি অবস্থায় যখন জনগণ গণতন্ত্রের দাবি তুলছিল, তখন বিমানবন্দরের সামনে বাউল ভাস্কর্য নিয়ে ফ্যাসাদ তুলেছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি আমিনী। সে সময় তিনি দাবি করেছিলেন অস্থায়ী সরকারের উচ্চমহল তাঁদের পক্ষে। সে সময়কার সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানও জোশের বশে আমিনীপন্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি খতমে নবুওতের নেতাও জানিয়েছিলেন, কোনো একজন ‘সব অর্থ দিচ্ছেন; কিন্তু তিনি নাম প্রকাশ করতে রাজি নন’ (সমকাল, ১৮ অক্টোবর ২০০৮)। সেনা-সমর্থিত অস্থায়ী সরকার আপসে নতিস্বীকার করেছিল। স্বৈরশাসক এরশাদের ক্ষমতা টেকানোর বড় অস্ত্র ছিল ধর্ম। আজকাল ধর্মবিদ্বেষও রাজনীতির পুুঁজি। মাঝখানে মরছে মানুষ।
0 Comment to "ওলামা লীগ: বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা"
Post a Comment