Tuesday 11 August 2015

খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা: অাসছে বিএনপির সুখবর

অাগামী কয়েকদিনের মধ্যে লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ যাত্রায় তিনি ‘চোখের চিকিৎসা এবং তারেক রহমান ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংস্থার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
তবে বিএনপির একাধিক ও সরকারের প্রভাবশালী দুটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের দাবি, ‘খালেদা জিয়ার এ সফর মূলত সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে অালোচনা এবং বিএনপির পরবর্তী করণীয় ও নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ এ দুটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘চলতি বছরের ৩ মার্চ খালেদা জিয়ার সঙ্গে হঠাৎ করেই একসঙ্গে ৯টি প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূতরা সাক্ষাৎ করেছিলেন। ওই সাক্ষাৎ ছিল প্রায় ২ ঘণ্টার। তখন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারে শোরগোল জোরালো ছিল। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ৩ মার্চ মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাটের নেতৃত্বে রাষ্ট্রদূতদের ওই বৈঠকেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাবনা এবং তাদের শর্ত নিয়ে অালোচনা হয়।’ ওই বৈঠক শেষে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তারা দুপক্ষকেই শান্তি প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অাওতাধীন প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ওই বৈঠকেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরবর্তী নির্বাচনের রূপরেখা নিয়ে অালোচনা হয়। প্রস্তাবগুলো ছিল- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে পরবর্তী নির্বাচনে মত দেওয়া, ৫ জানুয়ারি থেকে চলমান বিরামহীন অবরোধ-অান্দোলন থেকে সরে অাসা এবং জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা। এ প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া অান্দোলন থেকে সরেও অাসেন।
গোয়েন্দা সংস্থাটির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে অাসার জন্য খালেদা জিয়া লন্ডন যাচ্ছেন। সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে অালাপ করবেন পাশাপাশি তার দেশে ফেরার বিষয়েও মা-ছেলে সিদ্ধান্ত নেবেন। যদিও দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চোখের চিকিৎসা এবং ছেলে-পরিবার-সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেই বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া।
এদিকে সফর নিয়ে দলের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ড. অাসাদুজ্জামান রিপন গত সোমবার বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক বৈঠকও করতে পারেন।
তবে বিএনপি ও গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, অাসলে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের মধ্য দিয়ে পরবর্তী ক্ষমতায়নের প্রশ্নে সরকার ও অান্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি সবুজ সংকেত পেয়েছে বিএনপি ।
বৃহস্পতিবার ঢাকা ত্যাগ করতে পারেন খালেদা
অাগামীকাল বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যেই দিল্লি থেকে খালেদা জিয়ার যুক্তরাজ্যের ভিসা চূড়ান্ত হতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বৃহস্পতিবার রাতেই ঢাকা ত্যাগ করতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অধ্যাপক এমাজউদ্দীন অাহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, কালই তো (বুধবার) লন্ডনের পথে রওয়ানা হওয়ার কথা। তবে কাল রাতে যেহেতু জোটের বৈঠক, সেহেতু একটু পরিবর্তন হবে।
লন্ডনে রওয়ানা হওয়ার বিষয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রাহমান শিমুল বিশ্বাস মঙ্গলবার বিকালে জানান, সময় চূড়ান্ত হলে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে।
তবে যাত্রার সঠিক সময় জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবীর খান। তিনি বলেন, ম্যাডাম লন্ডনে যাচ্ছেন, এটি চূড়ান্ত। দু-এক দিনের মধ্যেই ঢাকা ত্যাগ করবেন। তবে সময়সূচি এখনও চূড়ান্ত নয়।
খালেদা জিয়ার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ইনাম অাহমেদ চৌধুরী জানান, ‘দিল্লি থেকে দুপুর ১২টার মধ্যেই ভিসা চূড়ান্ত হওয়ার কথা। হয়তো এর মধ্যে এলে তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।’ তবে এ সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের বাইরে বিএনপির কোনও নেতা সঙ্গী হবেন না বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।  
বিএনপির সুখবর অাসছে লন্ডন থেকে!
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, ইতোমধ্যেই বিএনপির কাছে সরকারের প্রস্তাব গেছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেওয়া, জামায়াত সঙ্গ ত্যাগ করা এবং ক্ষমতার পরবর্তী সময়ে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার হতে চাওয়া হয়েছে। ওই প্রস্তাবগুলো এ বছরের ৩ মার্চ রাষ্ট্রদূতদের বৈঠকেই দেওয়া হয়েছিল। যদিও এ নিয়ে কোনও পক্ষই কিছু বলেনি।
সূত্রের দাবি, দৃশ্যত ২০১৯ সালের অাগে নির্বাচন হবে না বললেও মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভেতরে ভেতরে রাজি এ সরকার । কারণ হিসেবে গোয়েন্দাসূত্র মনে করে, সরকারের নীতিনির্ধারকরা ইতোমধ্যে উপলব্ধি করেছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর কোনও অবস্থাতেই ২০১৯ সালের বেশি ক্ষমতায় থাকা যাবে না। অার ওই সময় পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখলে এর পরের সময়টা নিয়েও সরকারে সম-পরিমাণ দুশ্চিন্তা অাছে। পাশাপাশি ইতোমধ্যে অামেরিকা, ইইউসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ সরকারের শাসনতান্ত্রিক সিদ্ধান্তে অখুশি। সর্বশেষ এর প্রভাবে জিএসপি সুবিধা বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে ড. অাসাদুজ্জামান রিপন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সর্ম্পকের তিক্ততার কারণে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। কেন তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্ম্পকের তিক্ততা হল তা সরকারের কাছে জানতে চায় জনগণ । যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের দাবি ও পরামর্শের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের বাজে মন্তব্য করেছে এ সরকার ।
এ নিয়ে অাওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে অবস্থান নমনীয় থাকলেও অাদতে সেরকম কোনও প্রস্তাবনা বিএনপির কাছে গেছে কি না, এটার সত্যতা নেই। 
তবে গোয়েন্দা সংস্থাটির সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরে পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য, সমুদ্রের তেল-গ্যাস উত্তোলনসহ নানা বিষয়ে ওই দেশের সঙ্গে কথা হতে পারে। এসব বিষয়ে নিশ্চয়ই ইতিবাচক অাচরণ দেখাবেন খালেদা জিয়া।
এ বক্তব্যের যুক্তি হিসেবে সূত্রের দাবি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার সভা-সমাবেশে বলেছেন, ২০০১ সালে খালেদা জিয়া বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন।
ঘটনাটি ২০০১ সালের। ওই বছর লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এক দাওয়াতে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রয়াত জিল্লুর রহমান গিয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া ও মান্নায় ভূইয়া ছিলেন। সেখানে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারও উপস্থিত ছিলেন। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, এবারও সেরকম কিছু ঘটার সমূহ সম্ভাবনা অাছে।
তবে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন অাহমদ এ বিষয়টির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ম্যাডাম লন্ডনে যাচ্ছেন কার কাছে মুচলেকা দিতে? কে নেবে তার মুচলেকা। এটা সত্যি নয়।
তিনি অারও বলেন, ম্যাডাম যাচ্ছেন চোখের চিকিৎসা করাতে। দীর্ঘদিন নিজের সন্তানকে দেখেন না। তিনিও তো একজন মা। ইতোমধ্যে ছোট ছেলেকে হারিয়েছেন। এখন কি তার বড় ছেলেকে দেখার ইচ্ছে তার হতে পারে না।
বিএনপির একাধিক সূত্রমতে, পরবর্তী নির্বাচনে জামায়াতকে জোটে রাখা না রাখার বিষয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে অালোচনা হবে। ‘যদিও জামায়াতকে জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপির সায় নাই’-এমন অবস্থান ব্যক্ত করেছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।
গোয়েন্দাসূত্রটি মনে করে, সরকারের অাশঙ্কা প্রবল যে, বিএনপি কোনওভাবেই জামায়াতকে ছাড়তে চাইবে না। এ কারণে অাইনগতভাবে দলটিকে নিষিদ্ধ করলেও রাতারাতি নতুন নামে অাত্মপ্রকাশ করবে জামায়াত। এ নিয়ে সরকারে দুশ্চিন্তা রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে জামায়াতের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে সরকার।
সূত্রটির দাবি, সরকার চাইছে বিএনপিতে যেকোনও উপায়ে জামায়াতবিরোধী অংশটিকে আরও শক্তিশালী করতে। অন্যথা বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ক্ষমতার অংশীদার হলে সেটি অাওয়ামী লীগ ও দলটির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দলগুলোর জন্য নেতিবাচক ফলাফল বয়ে অানতে পারে। এ লক্ষ্যে যেকোনও উপায়ে বিএনপির কাছ থেকে বিশ্বাসযোগ্য অাশ্বাস চায় অাওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, এই অাশ্বাসের বিষয়ে অাগামী দিনের বিএনপির রাজনৈতিক কর্মপন্থা কী হবে তা নিয়ে বিএনপির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারী তারেক রহমানের মতামতকে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছেন খালেদা জিয়া। এ লক্ষ্যে মূলত তার লন্ডন সফর।
তবে খালেদা জিয়ার বিশ্বাসভাজন ও দলটির বর্তমান অন্যতম প্রধান পরামর্শদাতা অধ্যাপক এমাজউদ্দীন অাহমদ মনে করেন, সরকার বাধ্য হচ্ছে একটি নির্বাচন দিতে। এটা পরিস্থিতির কারণে। এভাবে তো দেশ চলতে পারে না। অাসন্ন নির্বাচন নিয়ে মূলত দুই দল বসে নির্বাচন কমিশন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। কোনও অবস্থাতেই বর্তমান ইসিকে দিয়ে নির্বাচন হবে না। এটিই থাকবে, অামাদের প্রথম ও প্রধান শর্ত।
এমাজউদ্দীন অারও বলেন, সরকার তো চায় ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে, সেটি তো হবে না। নির্বাচন তাদের দিতে হবে। এটি প্রধানমন্ত্রীর অধীনেও হবে না। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এজন্য নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে হবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য। সরকার তো রাজি হবে না, রাজি করাতে হবে।
জানা গেছে, গত সোমবার চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে অামেরিকায় গেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম অালমগীর। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, মির্জা ফখরুল লন্ডনে যেতে পারেন। তবে এমন সম্ভাবনার কথা বিএনপি নেতা ইনাম অাহমেদ চৌধুরী উড়িয়ে দিয়েছেন। তার দাবি, বৈঠক বা অালোচনা করতে হলে তো প্রযুক্তিই যথেষ্ট। দেখা করার তো দরকার নাই। তবে শেষ পর্যন্ত তো বলা যায় না। অাজকাল অামেরিকা থেকে লন্ডন যেতে অার কতইবা সময় লাগে।
খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরে রাজনৈতিক তাৎপর্য অাছে কি না এমন প্রশ্নে ইনাম অাহমেদ বলেন, রাজনৈতিক তাৎপর্য কেন থাকবে না। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটি দেশে গেলে তো সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দেখা হবেই। বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো হয়তো সে অায়োজন করে না, এটা হয়তো ব্যক্তি উদ্যোগেই হবে।

Share this

0 Comment to "খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা: অাসছে বিএনপির সুখবর"

Post a Comment