Wednesday 12 August 2015

ইন্টারনেট অাসলে কার হাতে, কে কমাবে দাম?

'২০ টাকায় ১ জিবি ইন্টারনেট চাই', '৫০ টাকায় ১ জিবি ইন্টারনেট চাই', 'ঢাকার দামে অামার গ্রামে ইন্টারনেট চাই' বলে প্রযুক্তিপ্রেমীরা যখন গলা ফাটাচ্ছে ঠিক সেসময় মোবাইলফোন অপারেটরদের শীর্ষ কর্তাদের কাছে ‌‌‌ডেকেও ইন্টারনেটের দাম কমানোর ব্যাপারে কিছুই বললেন না তিনি।
প্রয়োজনীয় অনেক কথায়ই বললেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম কিন্তু বললেন না কেবল ইন্টারনেটের দাম কমানোর কথা। আগামী বৈঠকে অবশ্যই তিনি এ বিষয়ে অপারেটরদের বলবেন বলে অাশ্বস্ত করলেন।
আমরাও আশাবাদী হতে চাই, তিনি এ বিষয়ে অগ্রগামী হবেন, ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে প্রযুক্তিপ্রেমীদের দীর্ঘদিনের আশা পূরণ করবেন।
গত রবিবার সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে তারানা হালিমের সঙ্গে দেশের মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর প্রধান নির্বাহীরা (সিইও) সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি তাদের কলড্রপ বন্ধ, দ্রুত এমএনপি চালু, প্যাকেজ একসেপ্ট না করলে কোনও টাকা কর্তন নয়-সহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেন। কিন্তু ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিষয়ে কিছুই বলেন না। যদিও তিনি পরে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অবশ্যই তিনি বিষয়টির প্রতি জোর দেবেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় বৈঠকে ইন্টানেটের দাম মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে নিয়ে আসতে টেলিযোগাযোগ খাতের সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেন। অন্যদিকে সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে অাইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ অাহমেদ পলক বলেছেন, 'গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।'
কিন্তু টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিঅারসির গলায় বাজছে ভিন্ন সুর। কমিশনের মত, 'দাম কমেছে, ধাপে ধাপে দাম অারও কমিয়ে আনা হবে।' কবে এবং কত দিনে সেসবের কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। সংস্থাটির চেয়ারম্যানের কথা হলো, 'দাম বেঁধে দিয়ে নয় বরং অপারেটরগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে আনা হবে।'
অথচ এই বিটিঅারসিই ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণে কাজ করছে। ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন পর্যায়ে দাম বেঁধে দিতে 'কস্ট মডেলিং' -এর পথে অগ্রসর হয়েছে সংস্থাটি। ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দেওয়ার ব্যাপারটি ঝুলে অাছে 'একজন সিনিয়র পরামর্শক নিয়োগ' না হওয়ায়। ফলে যুগোপযোগী 'টেলিকম ইকোনমিকস অ্যান্ড কস্ট মডেলিং' সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিটিআরসি ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর একজন সিনিয়র পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠায়। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে একটি তাগাদা পত্রও পাঠায়। অন্যদিকে ১১ মার্চ বিটিআরসি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রস্তাবিত পরামর্শকের বেতন-ভাতার পরিমাণ, অর্থপ্রদানের খাত, অনুমোদিত বাজেটে সংশ্লিষ্ট খাতে অর্থের সংস্থান আছে কি না- ইত্যাদি তথ্যাদি জানতে চেয়ে ‌‌‌চিঠি দিলে কমিশনে ১৯ মার্চ তার উত্তর পাঠায় কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও অনুমোদন না আসায় বিটিআরসি নিয়োগের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না।
তাহলে কোনটি সত্যি। কমিশনের চেয়ারম্যানের কথা না কি সরকারের ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগের কথা।
বিটিঅারসি বলছে, গত ৭ বছরে ব্যান্ডউইথের দাম কমেছে ৯০ শতাংশ এবং সংস্থাটি দাবি করছে গত এক বছরে মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম কমেছে ৩০ শতাংশেরও বেশি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত! ব্যান্ডউইথের ৯০ শতাংশ দাম কমানোর বিপরীতে ইন্টারনেটের দাম মাত্র ৩০ শতাংশ কমানোকে অনেক হাস্যকর বলে মন্তব্য করছেন। ব্যান্ডউইথের যে দাম কমানো হয়েছে তা তো ইন্টারনেটে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বা মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর জন্য। সাধারণ গ্রাহকের পর্যায়ে কি ব্যান্ডউইথের দাম ৯০ শতাংশ কমানো হয়েছে? গ্রাহকের পর্যায়ে তা কমানো হলে ইন্টারনেটের দাম অনেক কমে অাসত বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। যেখানে সবাই গলাফাঁটিয়ে বলছে, ব্যান্ডউইথের দাম 'শূন্য' করা হলেও ইন্টারনেটের দাম কমবে না। একইসঙ্গে কমাতে হবে ব্যান্ডউইথের সহযোগী ১৬টি অনুষঙ্গের দামও। তাহলেই না গ্রাহক কম দামে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে।
এক মোবাইলফোন অপারেটরের একজন কর্মকর্তা বললেন, অামাদের প্রতিষ্ঠান বিশাল অংকের টাকা খরচ করে লাইসেন্স নিয়েছে, লাইসেন্স নবায়নেও দিতে হচ্ছে বড় অকের টাকা। স্পেক্ট্রামও ব্যয়বহুল, তাহলে ইন্টারনেটের দাম অামরা কমাব কীভাবে? এ বিষয়গুলোর প্রতি সরকার নজর দিলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাই উপকৃত হবে। এই কর্মকর্তার কথা মোটেও অযৌক্তিক নয়। সরকারকে এসব জায়গায়ও দৃষ্টি দিতে হবে।
অনেকেই বলে থাকেন, ভয়েস কলের মতো ইন্টারনেটের দাম বেঁধে না দেওয়ায় অপারেটররা এই সুযোগটা নিচ্ছে। দাম বেঁধে দিলে একটি নিয়মের মধ্যে চলে অাসবে সবকিছু।
এদিকে একজন প্রযুক্তি গবেষক (যিনি ব্যান্ডউইথ নিয়ে কাজ করেন) বলছেন, বিটিআরসি’র তথ্যানুযায়ী দেশের ৯৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হলো মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। মোবাইল কোম্পানিগুলো আইআইজির (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) কাছ থেকে থেকে ব্যান্ডউইথ ক্রয় করে এমবিপিএস হিসাবে, মোট বিট হিসেবে নয়। কিন্তু তারা ইন্টারনেট বিক্রয় করে মোট বিট (ডাটা আদান প্রদান) হিসাব করে। এক এমবিপিএস -এর একটি লাইনে ৩০ দিনে ২ হাজার ৫৯২ গিগাবিট ডাটা আদান-প্রদান করা সম্ভব। ধারণা করি, এর শতকরা ৬০ শতাংশ গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে মোবাইল কোম্পানিগুলো অর্থাৎ ১ হাজার ৫৫৫.২ ডাটা গিগাবিট বিক্রি করা হয়।
গ্রামীণফোনের সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী প্যাকেজ অনুযায়ী ১ এমবিপিএস -এর সংযোগ থেকে অপারেটরটির মাসিক আয় ১৯ হাজার ৪৪০ টাকা যা এয়ারটেলের ক্ষেত্রে ২৩ হাজার ৮৫ টাকা। নিশ্চয় এমবিপিএস লিংকের মূল্য কোনও প্রতিষ্ঠানই বর্তমানে ৩ হাজার টাকার বেশি বিক্রি করে না। সুতরাং জনগণের সুবিধার্থে এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল কোম্পানিগুলোর দর কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা প্রয়োজন

Share this

0 Comment to "ইন্টারনেট অাসলে কার হাতে, কে কমাবে দাম?"

Post a Comment