Tuesday 11 August 2015

দুর্ভোগ পুঁজি করে বাণিজ্য


ফিটনেসবিহীন গাড়ি ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে দেশজুড়ে গত আগস্ট হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান শুরু হয়েছে অভিযানের ফলে রাজধানীর রাস্তায় ফিটনেসবিহীন পুরনো গাড়ি নামাচ্ছেন না পরিবহন মালিকরা আর হঠাৎ গাড়ি কমে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী কারণ দেড় কোটি মানুষের মহানগরীতে এমনিতেই গণপরিবহনের তীব্র সংকট রয়েছে ঢাকার পরিবহন সমিতিগুলোর হিসাব আমলে নিলে দেখা যায়, প্রতি তিন হাজার মানুষের জন্য শহরে বাস-মিনিবাস আছে মাত্র একটি প্রতিবার অভিযান শুরু হলেই মালিকরা কৌশলে রাস্তায় গাড়ি কমিয়ে দেন এর মাধ্যমে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করে তাঁরা সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেন, এতে কাজও হয় কিছুদিন পর অভিযান বন্ধ হয়ে যায় ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর অভিযান শুরু হয়ে চলে মোটে দেড় মাস
অভিযান শুরু হলে পরিবহন মালিকরা সরকারের কাছে সময়ের আবেদন করেন। তাঁরা নতুন গাড়ি নামানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর বছরের পর বছর পার হয়; কিন্তু কথা রাখেন না মালিকরা। ফলে আবারও রাজপথ দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করে সেই লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) কর্মকর্তাদের নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়েই ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো হয়। ভুয়া চালকরাও একই কায়দা ব্যবহার করে
পরিবহন মালিকরা বলছেন, তীব্র যানজট, ভাঙাচোরা রাস্তা, কম সুদে ব্যাংকঋণ না পাওয়া এবং শুল্ক সুবিধা না পাওয়ায় তাঁরা নতুন গাড়ি নামাতে পারছেন না। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তীব্র যানজটে ট্রিপ কমে যাওয়া, শিল্প হিসেবে পরিবহন খাতে বিশেষ শুল্ক সুবিধা না দেওয়ার পাশাপাশি পরিবহন ব্যবসা প্রভাবশালী বলয়ে জিম্মি থাকা এবং কম্পানিভিত্তিক বাস নেটওয়ার্কের বদলে ব্যক্তিকেন্দ্রিক পরিবহন ব্যবসার কারণেই মূলত রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পরিবহন ব্যবসায় সরাসরি জড়িত নন; কিন্তু রাজনৈতিক নেতার ছত্রচ্ছায়ায় মালিকদের বড় একটি অংশ রাজধানীর পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ করছে। রুট পারমিট দেওয়া থেকে শুরু করে কোন গাড়ি কী পরিমাণ নামানো হবে, তাও ঠিক করে দেয় তারা। এতে একজন নতুন মালিক গাড়ি কিনলেও তাদের নির্দেশ না পেলে রাস্তায় নামাতে পারেন না
বিআরটিএ পরিবহন মালিক সমিতি সূত্রগুলো বলছে, যথেষ্টসংখ্যক নতুন বাস-মিনিবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা ট্যাক্সিক্যাবের মতো গণপরিবহন নামছে না ঢাকার রাস্তায়। বরং বেশি রাস্তা দখল করে কম যাত্রী পরিবহন করে- এমন ছোট ছোট গাড়ি নামানো হচ্ছে। প্রাইভেট কার আনা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। দুর্ভোগে পড়া নগরবাসীর বড় একটি অংশ ভোগান্তি কমাতে এখন মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল কিনছে। বিশেষজ্ঞরাও ছোট গাড়ির অবাধ নিবন্ধন বন্ধ করে বড় গাড়ি নামানোর সুপারিশ করছেন

নতুন গাড়ি না নামানোয় পুরনো বাস, আয়ু শেষ হয়ে যাওয়া অটোরিকশা, নিষিদ্ধ মিশুক, বহু ব্যয়সাপেক্ষ স্বল্পসংখ্যক ট্যাক্সি ক্যাব নিয়ে চলছে নগরীর গণপরিবহন। যাত্রীর চেয়ে গণপরিবহন কম থাকায় গাড়ির জন্য মানুষের অপেক্ষা চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বহুক্ষণ অপেক্ষার পরও বাস-মিনিবাসে উঠতে না পেরে বহুগুণ ভাড়ায় চড়তে হয় অটোরিকশায়। নিম্ন আয়ের অনেকে হেঁটে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। কিংবা কিনে নিয়েছে বাইসাইকেল। নগরীর ফার্মগেট, শাহবাগ, কাকলী, মিরপুর-১০, শ্যামলী, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, উত্তরা- এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে গাড়ির অভাবে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অপেক্ষার যাত্রীর দেখা মেলে না। সর্বত্রই একই রব- গাড়ি নেই, গাড়ি নেই
আগে কাকলী-বনানীসহ বিভিন্ন স্থানে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলে নিত সিটিং বাসগুলো। এখন সেই সেবা সংকুচিত হয়েছে। কাউন্টার কমে যাওয়ায় নির্দিষ্ট কিছু স্থানে বাসে ওঠার জন্য লম্বা লাইন পড়ে সকাল-বিকেল। নিম্নবিত্তের অনেকে বাধ্য হয়ে বাইসাইকেল কিনছে। শেওড়াপাড়ার পীরেরবাগের বাসিন্দা আবদুল্লাহ নুহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সকাল ৯টাই হোক আর দুপুর ১২টাই হোক, কারওয়ান বাজারে যেতে বাস পাওয়া কষ্টকর। তাই বাইসাইকেল কিনেছি।'
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে বাসের অভাবে ফার্মগেট, কুড়িল, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, পিকআপ এমনকি ভ্যানে করে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। ফার্মগেটে দাঁড়িয়ে মিরপুর যাওয়ার জন্য বাস, লেগুনা না পেয়ে শেষে ভ্যানে ওঠেন আবদুল সালাম। তিনি জানান, ইন্দিরা রোড থেকে কাজীপাড়া যেতে কোনো দিন ভ্যান না পেলে ৮০-১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে রিকশায় চলাচল করতে হচ্ছে
শব্দ বায়ুদূষণের কারণে ২০০২ সাল থেকে পেট্রলচালিত ৪০ হাজার টু-স্ট্রোক স্কুটার তুলে দিয়ে রাজধানীতে অটোরিকশা নামানো হয়েছিল। আগে কাছাকাছি দূরত্বে, কর্মস্থলে স্কুল-কলেজে যাতায়াতের জন্য মধ্যবিত্তের নির্ভরযোগ্য বাহন ছিল রিকশা। এখন রাজধানীর বেশির ভাগ রাস্তায় রিকশা নিষিদ্ধ। গত সোমবার অনুষ্ঠিত জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা পরিষদের সভায় রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করা হয়েছে
বিআরটিএর জুলাই মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকায় নিবন্ধিত বিভিন্ন ধরনের গাড়ি আছে লাখ ৩৮ হাজার তিনটি। এর মধ্যে বাস মিনিবাস আছে ৩৩ হাজার ২৮টি। পরিবহন সমিতিগুলোর হিসাবে, এর মধ্যে এখন চলাচল করছে প্রায় পাঁচ হাজার। অন্যগুলো রাজধানীতে চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় ঢাকার বাইরে চালানো হচ্ছে। ঢাকায় চলাচলরত পাঁচ হাজার বাস-মিনিবাসের মধ্যে অর্ধেকের আয়ুও শেষ হয়ে গেছে
৪০০ বছরের পুরনো ঢাকা বিশ্বে বসবাসের অনুপযোগী নগরীগুলোর একটি। নগরীতে প্রায় দেড় কোটি লোকের বসবাস। এর সঙ্গে দিনে গড়ে অন্তত দুই হাজার নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) অধীনে পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি থাকায় ঢাকায় গণপরিবহনে প্রতিদিন ২১ লাখ ট্রিপের প্রয়োজন। তবে ঢাকার পরিবহন সমিতিগুলোর হিসাবে বাস্তরে ২১ লাখ ট্রিপের অর্ধেকও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তীব্র যানজটের কারণে ট্রিপের সংখ্যা কমছেই। ওই সমীক্ষা অনুসারে, রাজধানীর প্রতি তিন হাজার মানুষের চলাচলের জন্য বাস-মিনিবাস আছে মাত্র একটি
এমন অবস্থা কেন- জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির কোষাধ্যক্ষ আবুল মনসুর বুলবুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকা থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর, শ্রীপুর, কাপাসিয়ায় প্রভাতী-বনশ্রী নামে কম্পানির ২২৫টি বাস চলাচল করত। পাঁচ বছরে তা কমে হয়েছে ৮৫টি। আগে ট্রিপ দেওয়া সম্ভব হতো ছয়টি। এখন তিনটিও দেওয়া যায় না। যেসব বাস-মিনিবাস চলছে সেগুলোর দাম ২২ থেকে ৩০ লাখ টাকা। এই দামে গাড়ি কিনে না চালাতে পেরে বিক্রি করছেন মালিকরা। তিনি বলেন, ফুলবাড়িয়া থেকে জয়দেবপুর যেতে লাগছে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। টঙ্গী পার হতেই লাগছে দুই ঘণ্টা। জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে শ্রীপুর যেতে লাগছে ৩০ মিনিট। তার মানে ঢাকায় যানজট বহুগুণ বেশি
ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি, অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কম্পানিজসহ (এবিসি) বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে, গত সাত বছরে নগরীতে ৪৪টি বাস কম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। আর তার বড় কারণ তীব্র যানজট
বিশ্ব ট্রাফিক পরিস্থিতি থেকে জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে একটি বাস প্রতি ঘণ্টায় ১৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। তবে ঢাকার বাস চালকরা জানান, ঢাকায় বাসের গতি ঘণ্টায় মাত্র সাত কিলোমিটার। জানা গেছে, রংধনু, পূবালী, মাইলাইন, তাশিকো, শক্তি, ট্রান্সসিলভা, ব্লু-বার্ড, কপোতাক্ষ, ওয়ান লাইন, এরভিন, মধুমতি, কর্ণফুলী, গ্রেটওয়াল, পিংক সিটি, রাহবার, পাঞ্জেরী মনজিলসহ বিভিন্ন বাস কম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে যানজটে ট্রিপ কমে যাওয়ায়
ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এই শহরে গাড়ি চলার মতো অবস্থা নেই। মতিঝিল-মিরপুর রুটে আমার একটি বাস চলাচল করত। সেটি বেঁচে দিয়েছি। চলার রাস্তা না থাকলে গাড়ি এনে কী হবে?'
আসছে ১২৮০ নতুন গাড়ি : গণপরিবহনের সংকট কমাতে নতুন করে এক হাজার ২৮০টি বাস মিনিবাস নামানোর চেষ্টা চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। এত দিন বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তা আটকে ছিল। গত জুলাই অনুষ্ঠিত ঢাকা আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সভায় এগুলো চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১০০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিনিবাস। বাকি এক হাজার ১৮০টি সাধারণ বাস। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এসব নতুন বাস নামানো হবে বলে আরটিসি (আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি) সূত্রে জানা গেছে। এগুলো চলবে উত্তরা-মতিঝিল, নবীনগর-মতিঝিল, নারায়ণগঞ্জ-মতিঝিল, মিরপুর-মতিঝিল, মিরপুর-মাওয়া, মিরপুর-নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটে। আর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু চালুর পর মিরপুরের কালশী হয়ে চালু হওয়া মিরপুর-আব্দুল্লাহপুর রুটে নতুন ৪৫টি বাস নামানো হয়েছে
সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এন ছিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ১০০টি নতুন মিনিবাস তাড়াতাড়িই নামবে বলে আশা করছি। নতুন অটোরিকশার বিষয়টি আটকে আছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত না পাওয়ায়
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক গত সোমবার অনুষ্ঠিত জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা পরিষদের সভায় জানান, নতুন বাস নামাতে মালিক সমিতির নেতাদের নিয়ে তিনি সভায় বসবেন। তিনি বলেন, 'নতুন বাস নামাতে হলে কমপক্ষে চার হাজার কোটি টাকা লাগবে। আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে বসে কম মূল্যে কিভাবে গাড়ি আনা যায় তা ঠিক করব। উত্তরা থেকে মতিঝিল রুটে এসি বাস নামানো যায়।'
গণপরিবহনের সংকট : রাজধানীতে এখন আট হাজার ৩৬৬টি অটোরিকশার নিবন্ধন আছে। এগুলোর এক-তৃতীয়াংশই অচল। গণপরিবহন হিসেবে এসব গাড়ি নতুন করে নামছে খুব কম। নতুন আরো পাঁচ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা নামানোর সিদ্ধান্ত হলেও মন্ত্রণালয়ের অনুমতির অভাবে তা নামানো হচ্ছে না বলে বিআরটি সূত্র জানিয়েছে
ট্যাক্সিক্যাবের নিবন্ধন আছে ৩৬ হাজার ৪৬৫টির। সংশ্লিষ্ট খাতের মালিক-চালকরা জানিয়েছেন, তার মধ্যে এখন চলছে মাত্র দুই হাজার। বাকিগুলো অচল। আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট তমা কনস্ট্রাকশন কম্পানি নতুন কিছু ট্যাক্সিক্যাব নামালেও এগুলোর ভাড়া সাধারণ যাত্রীদের নাগালের বাইরে। কম দূরত্বের গন্তব্যে চলাচলের জন্য হিউম্যান হলার আছে তিন হাজার ৮৯২টি। তার একটি বড় অংশই কারখানায় অচল পড়ে থাকে
তবে গণপরিবহনের সংকট তীব্র হলেও বিপরীত চিত্র ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধিত আছে মোটরসাইকেল, প্রায় তিন লাখ ৬০ হাজার। তার পরই সংখ্যার দিক থেকে বেশি নিবন্ধিত গাড়ি হলো প্রাইভেট কার, দুই লাখ ১৪ হাজার ৯৮৭টি। এসব তথ্য বিআরটিএর জুলাইয়ের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে
কম্পানিভিত্তিক নেটওয়ার্ক নেই : দেশের পরিবহন খাতে বিনিয়োগ আছে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা। রাজধানীতে নতুন বাস না নামার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রভাব। সঙ্গে আছে ব্যবসার প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ না থাকা। ডিটিসিএর সমীক্ষানুসারে, আটটি বড় বাস কম্পানি আছে রাজধানীতে। এগুলোর বহরে ৫০টির বেশি বাস আছে। আরো ৭৩টি কম্পানি আছে, যেগুলোর বহরে ৫০টির কম বাস আছে
বুয়েটের অধ্যাপক . সামসুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেসরকারিভাবে বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে একটি কম্পানি গঠন করে। চালকের বেতন নির্দিষ্ট। একই রুটের টিকিট একই রঙের। এখানে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলার দিকে নজর থাকছে না। মালিকরাও একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকেন। ঢাকায় ব্যক্তিনির্ভরতার কারণে কম্পানিভিত্তিক ব্যবসা গড়ে ওঠেনি। কম্পানিভিত্তিক বাস চলাচল ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই সুশৃঙ্খল ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়
ঘোষণা আছে, সুবিধা নেই : পরিবহন মালিক আবুল মনসুর বুলবুল বলেন, 'শিল্প ঘোষণার পরও গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক সুবিধা পাচ্ছি না। আমরা ব্যাংক সুদের হার - শতাংশ করার দাবি জানাচ্ছি। এখন এই হার ১৭-১৮ শতাংশ। সরকারের নিয়ম অনুসারে, ডিজেলচালিত বাস ১৫ বছর গ্যাসচালিত বাস ২০ বছর চালানো যায়। ঢাকায় রাস্তার দুরবস্থা, কম দূরত্বে গাড়ি চালাতে গিয়ে গাড়ির রং উঠে যাচ্ছে। তার পরও ফিটনেসহীন গাড়ি যে নেই তা বলব না।'
বাসের চেয়ে প্রাইভেট কার বেশি : আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী প্রধান সড়কগুলোয় দুই লাখ ১৬ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারে, ঢাকায় চলাচল করছে তার চেয়ে প্রায় লাখ বেশি। দেশে নিবন্ধিত প্রাইভেট কারের ৭৫ শতাংশ চলাচল করছে ঢাকায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, একই পরিবারের কতটি প্রাইভেট কার রাস্তায় চলতে পারবে তার নীতিমালা করার প্রস্তাব দিয়েছি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা পরিষদের সভায়। এর আগেও প্রস্তাব দিয়েছি, কাজ হয়নি
পরিবেশ পরিবহন বিশেষজ্ঞ আবু নাসের খান বলেন, সন্তানকে স্কুলে আনা-নেওয়া মালিকের অফিসে যাতায়াতের জন্য একটি গাড়িই রাস্তায় নামছে চার থেকে পাঁচ বার। বড় বাস থাকলে রাস্তায় শৃঙ্খলা থাকত, গণমানুষ তা ব্যবহার করতে পারত

Share this

0 Comment to "দুর্ভোগ পুঁজি করে বাণিজ্য"

Post a Comment